আমরা আগের অধ্যায় (প্রথম অধ্যায়) এ যা যা করেছিলামঃ
- সার্চ ইঞ্জিনের ব্যাবহারকারিদের চিহ্নিত করেছি।
- কোন পণ্য / সেবার জন্য কোথায় প্রচার করা উচিত তা জেনেছি।
- ক্লায়েন্টকে টার্গেট করার পদ্ধতি জেনেছি।
- এস.ই.ও ফ্রেন্ডলি সাইট তৈরি করার টিপস পেয়েছি।
- সার্চ ইঞ্জিন এর সাথে আপনার সম্পর্ক তৈরি করার পদ্ধতি জেনেছি।
- সার্চ ইঞ্জিনগুলোর অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের কথা জেনেছি।
- অরগানিক এবং পেইড রেজাল্ট সম্পর্কে ধারনা পেয়েছি।
- ক্রাউলার বা রোবট সম্পর্কে জেনেছি।
এখন আমরা সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সাথে পরিচিত হবো
ü সার্চ ইঞ্জিন সমূহের সাধারণ সংযোগ খুজে বের করতে হবে।
ü মেজর এবং মিনর সার্চ ইঞ্জিন এর সাথে পরিচিত হবো।
ü ইঞ্জিনের মধ্যে উপযুক্ত স্থান খুজে বের করতে হবে।
ü মেটা সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে ধারনা লাভ করবো।
একটি সার্চ ইঞ্জিন সবসময় ব্যাবহারকারির চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফলাফল দেখানোর চেষ্টা করে। তারা আপনাকে (ব্যাবহারকারিকে) খুশি করার চেষ্টা করে। কারন, আপনি যা খুজছেন সেটা যদি সহজে পেয়ে যান, তাহলে আপনি তাদের সাইটে আবার আসবেন। আপনি যত বেশী তাদের সাইটে আসবেন, তাদের তত বেশী আয় হবে। অর্থাৎ আপনার উপকার করে তাদের নিজেদেরও উপকার হচ্ছে। কবি কি আর সাধে বলেছেন যে, সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।
এই অধ্যায়ে আমরা প্রধান (Major) সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সাথে পরিচিত হবো, এবং তাদের মিল ও পার্থক্যগুলো খুজে বের করবো। জানব, কিভাবে একটি ডিরেক্টরি কাজ করে। অরগানিক এবং পেইড রেজাল্ট এর সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা পাবো। এবং জানবো, কিভাবে সার্চ ইঞ্জিন তাদের অরগানিক রেজাল্ট প্রদর্শন করে? পাশাপাশি আপনি সার্চ ইঞ্জিন এর পেইড প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানব এবং বুঝতে পারবো, এস.ই.ও এর জন্য মেটা সার্চ ইঞ্জিন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
ü সার্চ ইঞ্জিন সমূহের সাধারণ সংযোগ খুজে বের করাঃ
সার্চ ইঞ্জিন তার ফলাফলকে প্রাসঙ্গিক রাখার জন্য সকল ওয়েবসাইট এর মূল বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। আপনার সাইট খুজে পেতে আপনি সার্চ ইঞ্জিনকে সাহায্য করতে পারেন তিনটি বিষয়ের মাধ্যমে, যেগুলো সকল সার্চ ইঞ্জিন খোজ করে।
১। বস্তু (Content) – একটি ওয়েবসাইট এর প্রান হচ্ছে ওই সাইটের কন্টেন্ট বা বস্তু। কন্টেন্ট হচ্ছে ওয়েবসাইটে অবস্থিত সকল তথ্য। এখানে তথ্য বলতে শুধু লেখা (Text) বোঝানো হয়নি। ছবি, ভিডিও, অডিও, ইন্টারএকটিভ টেকনোলজি ইত্যাদি সবকিছুকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যা কিছু ওয়েব স্পেস দখল করে থাকে, সবই কন্টেন্ট। আপনি বলতে পারেন, কন্টেন্টকে ওয়েবসাইটের প্রান বললাম কেন? আপনি একটি দোকান দিয়ে বসলেন।ভাল লোকেশনে দোকান নিলেন। দোকান খুব সুন্দর করে সাজালেন। প্রচারনাও করলেন। কিন্তু, দোকানে কোন পণ্য নেই। তাহলে, বাকি সব কিছুর কি কোন অর্থ আছে? তেমনি ভাবে আপনার সাইট যত সুন্দর ও আকর্ষণীয় হোক না কেন, মানসম্মত কন্টেন্ট না থাকলে এসবের কোন মূল্য নেই। এবার ধরুন, আপনি একটি জুতা দোকান খুললেন। সব কিছু করলেন। তারপর সেই দোকান এ জুতা না রেখে শার্ট রাখলেন। ফলাফল কি হবে জানেন? আপনার দোকানে ক্রেতা আসবে, কিন্তু, বিক্রয় হবে না। কারন, আপনার জুতার প্রচারনা / বিজ্ঞাপন দেখে জুতা কেনার কাস্টমার আপনার দোকানে এসেছে আর শার্ট কেনার কাস্টমার অন্য দোকানে চলে গেছে। আমার মেসেজ কি আপনার কাছে পরিস্কার? অর্থাৎ আমি বোঝাতে চেয়েছি যে, আপনার সাইটের ক্যাটাগরি, কিওয়ার্ড ইত্যাদির সাথে কন্টেন্ট মিল থাকতে হবে। আপনার সাইটে প্রচুর কন্টেন্ট থাকলে সার্চ ইঞ্জিনও এটিকে ভাল চোখে দেখবে। যত বেশী (সামঞ্জস্যপূর্ণ) কন্টেন্ট থাকবে, ততই এস.ই.ও এর কাজ এগিয়ে থাকবে।
২। জনপ্রিয়তা (Popularity) – জনপ্রিয়তা বিষয়টি বোঝানোর জন্য আমি আপনাদের হাই স্কুল এ ফিরিয়ে নিয়ে যাব। একটি স্কুল এ কোন ছাত্রটি বেশী জনপ্রিয়? যাকে অনেকেই চেনে। যার সম্পর্কে অনেকেই অনেক সময় (ইতিবাচক) আলোচনা করে। এস.ই.ও এর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা এরকম। কতটি ওয়েবসাইটে আপনার সাইটের লিংক দেয়া আছে, এবং আপনার সাইট এ কতটি অন্য সাইটের লিংক দেয়া আছে, সেটি গুগোল পরিমাপ করে আপনার সাইটের জনপ্রিয়তা মূল্যায়ন করে।
৩। স্থাপত্য (Architecture)- আপনি একটি মুদি দোকানে ঢুকে যদি দেখেন সব পণ্য তাকের মধ্যে এলোমেলো ভাবে সাজানো,তাহলে আপনার পক্ষে আপনার কাঙ্ক্ষিত পণ্য খুজে বের করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। হয়তোবা আপনি ওই দোকান এ খোঁজাখুঁজি করা বাদ দিয়ে অন্য একটি দোকানে চলে যাবেন, যেখানে সব গোছানো আছে। ক্রাউলার ও ঠিক একই কাজটি করে। আমরা আগেও বলেছি যে, সার্চ ইঞ্জিন উইকিপিডিয়াকে পছন্দ করে এর নির্মাণ কৌশল এর কারনে। এটা সার্চ করার মত লেখায় পরিপূর্ণ। ছবিগুলোতে Alt ট্যাগ ব্যাবহার করা হয়েছে।পেইজের হাইপারলিংক গুলো ও (permalink) কিওয়ার্ড ধারন করে।
সার্চ ইঞ্জিন আপনার সাইট ক্রাউলিং করার সময় যেসব ভেরিয়েবল (২০০ এর ও বেশী) এনালাইজ করে, তার মধ্যে তাৎক্ষনিক দুইটি ভেরিয়েবল এর উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। একটি হচ্ছে, আপনার সার্ভার কতোটা দ্রুত। কত অল্প সময়ে আপনার সাইটের প্রতিটি পেইজ লোড হয়। আপনার সার্ভার যদি প্রতি সেকেন্ড এ একটি করে পেইজ লোড করে, তাহলে গুগোল বুট এটিকে খুবই স্লো সার্ভার হিসেবে চিহ্নিত করবে। আমাদের কাছে যদিও এক সেকেন্ড খুবই কম সময়, কিন্তু ক্রাউলার এর হিসেবে ১ সেকেন্ড এ ৫-৭ টি পেইজ লোড হওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। একটি পেইজ লোড করতে যদি ১ সেকেন্ড এর ও বেশী সময় লাগে, তাহলে ভেবে দেখুন ১০,০০০ পেইজ ক্রাউল করতে ক্রাউলার এর কত সময় লাগবে? তাছাড়া, সার্ভার ক্রাশ এর হাত থেকে বাঁচতে ক্রাউলার কয়েক পেইজ করে ভাগে ভাগে ক্রাউল করে। এই কারনে একটি দ্রুতগতিতে লোড হওয়া সাইট, ধীরগতিতে লোড হওয়া সাইট থেকে বেশী অগ্রাধিকার পায়।এখানে সুযোগ হচ্ছে,দ্রুতগতির সার্ভারের সাইট বুট/ক্রাউলার খুব ভালভাবে ইনডেক্স করে।
দ্বিতীয় ভেরিয়েবলটি খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। সার্চ ইঞ্জিন একটি বিষয় দ্বারা খুবই প্রভাবিত হয়, সেটি হোল, বাউন্স রেট (Bounce Rate) । বাউন্স হচ্ছে, যখন কোন একজন ভিজিটর গুগোলে সার্চ করে আপনার সাইটে ঢুকে সাথে সাথেই ব্যাক বাটন চেপে পেছনে, অর্থাৎ সার্চ রেজাল্ট পেইজে চলে গেছে। সার্চ ইঞ্জিন খুব ভালভাবেই এটি চিহ্নিত করে, যখন ইউজার সার্চ করে আপনার সাইটে এসে খুব অল্প সময়েই অন্য সাইটে চলে যায়। এসব ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিন ধরে নেয় যে, আপনার সাইটে পরিপূর্ণ কন্টেন্ট নেই। মনে রাখবেন, ইঞ্জিন সবসময় সার্চ কুয়েরির সাথে ফলাফলের সামঞ্জস্য রাখে,এবং এই বিষয়ের উপর আপনার রেংকিং অনেকাংশে নির্ভর করে।
তাহলে, সব সার্চ ইঞ্জিন যদি এই বিষয়গুলো খেয়াল করে, তাহলে ইয়াহু বা গুগোল এ কি আলাদাভাবে কাজ করতে হবে? হ্যাঁ, কারন প্রত্যেকটি সার্চ ইঞ্জিন এর সতন্ত্র এলগরিদম রয়েছে। যদিও তারা অভ্যন্তরীণ তথ্য শেয়ার করে, তথাপি তাদের প্রদর্শনের নিজ নিজ পদ্ধতি রয়েছে। গুগোলে যে সাইট (একটি নির্দিষ্ট সার্চ কুয়েরিতে) প্রথমে শো করে, সেটি ইয়াহুতে প্রথম ১০ টি সাইটের মধ্যে ও না দেখাতে পারে।
প্রধান (Major) ইঞ্জিনগুলোর পরিচিতিঃ
প্রধান সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সাথে পরিচিত হওয়ার সময় এখনি। আমরা আগে বলেছিলাম যে, এরা প্রত্যেকে কিছুটা আলাদাভাবে সামঞ্জস্যতা খোঁজে। যেমন, গুগোল ইয়াহু থেকে বেশী কিওয়ার্ড এর সাথে মিল খোঁজে। তাই, একই সার্চ কুয়েরির জন্য ইয়াহু এবং গুগোলের রেজাল্ট পেইজ সাধারনত সম্পূর্ণ আলাদা হয়। একটি সার্চ ইঞ্জিন প্রয়োজন ছাড়া অন্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে উন্নত হয়না। এই কারনেই, আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আপনার বিষয়ের জন্য কোন সার্চ ইঞ্জিন ভাল হবে। এটি নির্ভর করবে, আপনি কি খুজছেন এবং কি খুজে পেয়েছেন তার উপর।
অরগানিক বনাম পেইড সার্চ রেজাল্টঃ
যে পদ্ধতিগুলোতে আমরা প্রত্যেকটি সার্চ ইঞ্জিনকে আলাদা করতে পারি, তার মধ্যে প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে অরগানিক রেজাল্ট এবং পেইড রেজাল্টকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রক্রিয়া। অরগানিক রেজাল্ট হচ্ছে সেসব সাইট, যেগুলোর তথ্য সার্চ ইঞ্জিন নিজে তার ক্রাউলার / রোবট এর মাধ্যমে সংগ্রহ করে। আর পেইড রেজাল্ট (এটিকে Sponsored Listing ও বলা হয়ে থাকে) হচ্ছে যেসব সাইটের তথ্য প্রকাশের জন্য ওই সাইটের মালিক সার্চ ইঞ্জিনকে অর্থ প্রদান করে থাকে। সাধারনত পেইড রেজাল্টগুলো বিজ্ঞাপনের মত পেইজের ডান পাশে সারিবদ্ধভাবে প্রদর্শিত হয়, অথবা মূল ফলাফলের উপরে থাকে। পেইড রেজাল্ট ইউজার এর সার্চ কুয়েরি এর সাথে খুব একটা মিল রেখে প্রদর্শিত হয় না, শুধুমাত্র কয়েকটি কিওয়ার্ড এর মিল রেখেই দেখানো হয়। যেসব কোম্পানি পেইড রেজাল্ট এর মাধ্যমে ট্রাফিক পেতে চায়, তারা (কয়েকটি নীতিমালা অনুসরণ করে) প্রায় যেকোনো কিওয়ার্ড এর উপরই বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে পারে। এই বিজ্ঞাপন এর মূল্য কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন, বিজ্ঞাপনদাতা যে কিওয়ার্ড এর উপর বিজ্ঞাপন দেখাতে চায়, সেটি কতোটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ, সেই কিওয়ার্ড এ কি পরিমান সার্চ করা হয় এগুলোর উপর। বেশী প্রতিযোগিতাপূর্ণ কিওয়ার্ড এর উপর পেইড রেজাল্ট দেখানোর জন্য বেশী অর্থ প্রদান করতে হয়। আবার, বিজ্ঞাপন দাতা যে সাইট প্রদর্শন করবে, তার মানের উপরও বিজ্ঞাপন এর মূল্য নির্ভর করে। সাইট যত বেশী ভাল মানের (এস.ই.ও ফ্রেন্ডলি) হবে, বিজ্ঞাপন এর মূল্য তত কমবে। ধরুন, আপনি কণ্ঠশিল্পী হাবীব এর গান খোঁজার জন্য সার্চ করেছেন Habib Music লিখে, অরগানিক রেজাল্ট এ সে হাবিবের গানই আপনাকে দেখাবে। কিন্তু, পেইড রেজাল্টে সে হাবিবের গান এর কোন বিজ্ঞাপন না পেয়ে Music কিওয়ার্ডযুক্ত অন্য কোন বিজ্ঞাপন আপনাকে দেখাবে। যদিও, তার শুধুমাত্র হাবীবের গানগুলোই দেখানো উচিত। এই কারনেই ইউজাররা পেইড রেজাল্টে খুব কম ক্লিক করে। তাই, শর্টকাট পথ (পেইড রেজাল্ট) বাদ দিয়ে আপনাকে অরগানিক রেজাল্টে প্রথমে যাওয়া উচিত। সেটি করার জন্য আপনাকে ভাল মানের সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করতে হবে।
ওয়েব ডিরেক্টরিঃ
কিছু কিছু সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবসাইট এর তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ওয়েব ডিরেক্টরি ব্যাবহার করে। ওয়েব ডিরেক্টরি হচ্ছে এক প্রোগ্রাম (ক্ষেত্রবিশেষে এক ধরনের সাইট, সার্চ ইঞ্জিন এর ক্ষেত্রে প্রগ্রাম) যেখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরি এর অনেক সাইট এর লিস্ট থাকে। ব্যাপারটা অনেকটা টেলিফোন ডিরেক্টরি এর মত। বাজারে টেলিফোন ডিরেক্টরি কিনতে পাওয়া যায়, যেখানে হসপিটাল, স্কুল-কলেজ, ফায়ার সার্ভিস, থানা, বড় বড় ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গের টেলিফোন নাম্বার থাকে। আপনি চাইলেই সেখান থেকে যেকোন ব্যাক্তির নাম্বার সংগ্রহ করতে পারেন। এটি আপনার একটি ক্ষুদ্র নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। সার্চ ইঞ্জিন এর ইনডেক্স ও ডিরেক্টরি এর মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে সাজানোর প্রক্রিয়ায়। ইনডেক্স করা হয় সার্চ ইঞ্জিনের এলগরিদম অনুসারে। আর ডিরেক্টরিতে শুধুমাত্র সাইটগুলোর নাম এবং এড্রেস রাখা হয় সারিবদ্ধভাবে, অনেকটা টেলিফোন ডিরেক্টরি এর মত।
[ তথ্যঃ ডিরেক্টরিতে আলাদাভাবেও সার্চ করা যায়। কিন্তু কিছু কিছু ডিরেক্টরি সার্চ ইঞ্জিনের মত নির্দিষ্ট কুয়েরির জন্য উন্নতমানের ফলাফল প্রদর্শন করতে পারে না ]
নিচে কয়েকটি সার্চ ইঞ্জিন এর ফলাফল, পেইড রেজাল্ট ও ডিরেক্টরি এর তুলনামূলক তালিকা দেয়া হোলঃ
ইঞ্জিনের নাম
|
অরগানিক
|
পে পার ক্লিক
|
ডিরেক্টরি
|
Yahoo! – ক্রাউলার এর নামঃ Slurp
|
হ্যাঁ
|
হ্যাঁ,Yahoo!
Search
Marketing
|
হ্যাঁ,Yahoo!
Directory.
|
Google – ক্রাউলার এর নামঃ Googlebot
|
হ্যাঁ
|
হ্যাঁ, Google
AdWords.
|
হ্যাঁ, Google
Directory.
|
Live – ক্রাউলার এর নামঃ MSNbot
|
হ্যাঁ
|
হ্যাঁ, Microsoft
adCenter.
|
না
|
Yahoo!
১৯৯৪ সালে স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২ জন ছাত্র ডেভিড ফিলো এবং জেরি ইয়াং ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেন একটি ওয়েবসাইট হিসেবে। পরবর্তীতে এটি ধাপে ধাপে উন্নত হয়, এবং সার্চ, ই-মেইল, কেনা-কাটা ইত্যাদি সহ আরও অনেক দেবা প্রদান করা শুরু করে। এটি পরে সারা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পায়। আপনার মোবাইলে যে নাম্বার সেইভ করা নেই, সেই নাম্বার খুজে পাওয়া যেমন আপনার জন্য কঠিন, তেমনি যে ওয়েবসাইট ইয়াহু ডিরেক্টরিতে নেই, সেটিও খুজে পাওয়া কঠিন। গত কয়েক বছর ধরে ইয়াহু তাদের সার্চ ফাংশন (গুগোল এর মত) কয়েকটি সার্চ ইঞ্জিনের সাথে শেয়ার করছে।
ইয়াহু এর অরগানিক রেজাল্টঃ
২০০২ সালে ইয়াহু কোম্পানি বুঝতে পারল যে, সার্চ বিষয়টি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। তখন তারা বিভিন্ন সার্চ কোম্পানি এর সাথে যোগাযোগ করলো। ওই বছরের ডিসেম্বরের দিকে তারা Inktomi নামের একটি সার্চ কোম্পানি কিনে নিল, এবং পে পার ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপন শুরু করলো। ২০০৩ সালে তারা Overture নামে আরেকটি সার্চ কোম্পানি কিনে নিল। Overture কোম্পানি AllTheWeb এবং AltaVista নামে ২ টি সার্চ ওয়েবসাইট এর মালিক ছিল। ইয়াহু তখন এই সবগুলো সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানি এর প্রযুক্তিগুলোকে সংমিশ্রণ করলো এবং নতুন সার্চ ইঞ্জিন এর পরিকল্পনা করলো। ১৭, ফেব্রুয়ারি ২০০৪ এ তারা গুগোলকে তাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নিজস্ব ইনডেক্স এবং ডিরেক্টরি তৈরি করলো।
ইয়াহু এর পেইড রেজাল্টঃ
Overture কোম্পানি এর একটি প্রোজেক্ট ছিল Yahoo! Search Marketing (YSM) । তারও আগে এটি GoTo! কোম্পানি এর প্রোজেক্ট ছিল। এটি একটি সত্যিকারের পে পার ক্লিক ইঞ্জিন। Yahoo! Search Marketing (YSM) এবং Google AdWords এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে YSM এর একটি বিজ্ঞাপন সম্পাদনা প্রক্রিয়া শেষ করে সক্রিয় হতে AdWords থেকে অনেক বেশী সময় নেয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, YSM পেইড বিজ্ঞাপন সমূহের মধ্যে অর্থগত রেংকিং করে থাকে। অর্থাৎ একটি বিজ্ঞাপন (পে পার ক্লিক) এর জন্য যে যত বেশী টাকা দেবে, তার বিজ্ঞাপন তত উপরে দেখাবে। ধরুন, আপনি Biman Bangladesh Airlines এর ওয়েবসাইট সার্চ করছেন। কিন্তু, পেইড বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ইয়াহু কোম্পানিকে Biman Bangladesh Airlines থেকে Air Arabia বেশী টাকা দিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা আপনাকে আগে Air Arabia এর সাইট দেখাবে, তারপর Biman Bangladesh Airlines এর সাইট দেখাবে। এটি অনেক স্বার্থপর প্রক্রিয়া। তবে, বর্তমানে এই পদ্ধতি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে।
Yahoo! Search Marketing (YSM) ব্যাবহার করতে গেলে আপনার সামনে ২ টি অপশন আছে।
Ø Fast Track: এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞাপনদাতা নিজে campaign setup করে, keyword নির্ধারণ করে, বিজ্ঞাপন এর বর্ণনা সংযুক্ত করে, তার বাজেট প্রদান করে। তার বিজ্ঞাপন এর ক্যাটাগরি, কিওয়ার্ড এর প্রতিযোগী ইত্যাদির উপর দাম নির্ধারিত হয়।
Ø Self Service: এখানে বিজ্ঞাপনদাতা তার সাইট এর নাম এবং একটি যেকোনো পরিমান অর্থ বিড করে। এটি অনেকটা নিলাম এর মত। যার টাকা বেশী, তার বিজ্ঞাপন আগে দেখাবে।
Yahoo! distribution network এর মধ্যে AltaVista, Excite, Go2Net,
InfoSpace এবং Microsoft Live Search রয়েছে। এবং তাদের কন্টেন্ট পার্টনার এর মধ্যে রয়েছে CNN, Consumer Review Network, Knight Ridder এবং আরও অনেকে...
সার্চ সাবমিট প্রো
পেইড রেজাল্ট এর পাশাপাশি ইয়াহু একটি অফার রেখেছে Search Submit Pro (SSP) নামে। এই অপশনটির মাধ্যমে আপনি আপনার সাইটকে অথবা সাইটের কন্টেন্ট এর পরিবর্তনকে সার্চ ইঞ্জিনে সাবমিট করতে পারবেন। এই পদ্ধতির আপনার সাইটকে নিশ্চিতভাবে অরগানিক রেজাল্ট এর জন্য ইনডেক্স করিয়ে নিতে পারবেন। ক্রাউলার কখন আপনার সাইটে আসবে, ইনডেক্স করবে, সেই অপেক্ষা না করে সরাসরি আপনার সাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে প্রবেশ করিয়ে দেয়ার পদ্ধতি হোল SSP। এটি আপনার ওয়েবসাইট উচ্চ রেংকিং হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। কারন, আপনার সাইটের সকল কন্টেন্ট এই পদ্ধতিতে ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স হয়। যেহেতু, আপনার সাইট সার্চ কুয়েরি অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদর্শিত হবে, সুতরাং আপনার কোন কিওয়ার্ড বিড করার প্রয়োজন হচ্ছে না।
ইয়াহু ডিরেক্টরি
ইয়াহু ডিরেক্টরি হচ্ছে ইয়াহু কোম্পানির নিজস্ব ওয়েব ডিরেক্টরি। এটি, একইসাথে বিনামূল্যের এবং প্রিমিয়াম (অর্থের বিনিময়ে) ডিরেক্টরি সেবা প্রদান করে। আপনি যখন কোন তথ্য বা সেবা খুজছেন, তখন ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন এ সার্চ করবেন। আর, যখন কোন সাইট খুজছেন, তখন চাইলে সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ না করে সরাসরি ডিরেক্টরিতে সার্চ করতে পারেন। ডিরেক্টরিতেও রেংকিং এর ভিত্তিতে সাইটসমুহকে প্রদর্শন করা হয়। যখন থেকে ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন এর প্রচলন শুরু হয়েছে, তখন থেকেই সরাসরি ডিরেক্টরি ব্যাবহারকারির সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
Google
গুগোল স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এর অন্য দুই জন ছাত্রের একটি রিসার্চ প্রোজেক্ট ছিল। এরা হোল ল্যারি পেইজ এবং সিরজি ব্রিন। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে তারা গবেষণা করে এমন একটি সার্চ ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন, যা সাইটসমূহের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে এবং আগের সকল সার্চ ইঞ্জিন থেকে উন্নতমানের রেংকিং করতে পারে। প্রত্যেকটি পেইজের উপর সার্চ কুয়েরি কত বেশীবার ব্যাবহার হয়েছে, তার উপর নির্ভর করে এটি রেংকিং করে থাকে। তারা এই ইঞ্জিনটির নাম দিয়েছিল BackRub । কারন, এই পদ্ধতিটি প্রতিটি সাইট এর ব্যাকলিংক নির্ণয় করত, ওই সাইট এর জনপ্রিয়তা নির্ণয় করার জন্য। (**অন্য একটি সাইটে যখন আপনার সাইটের লিংক ব্যাবহার করা হয়, তাকে ব্যাকলিংক বলে) । এই BackRub কেই ১৯৯৮ সালে Google নামকরন করা হয়।
গুগোল এর অরগানিক রেজাল্টঃ
সময়ের সাথে সাথে গুগোল একটি সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখানে গুগোল এর জনপ্রিয়তা পাওয়ার কয়েকটি কারন উল্লেখ করা হোল।
১-সার্চ কুয়েরির সাথে অধিক মিলঃ গুগোল এর জনপ্রিয়তার মুলে রয়েছে, সার্চ কুয়েরি এর সাথে অধিক মিল রেখে সার্চ রেজাল্ট দেখাতে পারার ক্ষমতা।
২-গবেষণা ভিত্তিক ফলাফলঃ যেহেতু, ইন্টারনেট এ অধিকাংশ সার্চই গবেষণামুলক হয়, এবং গুগোল গবেষণাভিত্তিক ফলাফল প্রদানে অধিক গ্রহণযোগ্য, তাই এটি গবেষকদের কাছে চরম মূল্যবান।
৩-পেইজ রেংকঃ গুগোল এর সার্চ এলগরিদম এর একটি অংশ হচ্ছে পেইজ রেংক (PR) , যেটি একটি সাইটকে গুরুত্ব প্রদানে সহায়তা করে।
৪-বিরতিহীন ইনডেক্সঃ গুগোল কোটি কোটি পেইজকে ইনডেক্স করেছে, এবং এখনো করেই যাচ্ছে। নিত্য নতুন তথ্য সংযুক্ত করছে।
৫-ব্র্যান্ড পরিচিতিঃ আপনি জানলে হয়তো অবাক হবেন যে Google ওয়ার্ডটি একটি ক্রিয়াপদ (Verb) হিসেবে dictionary তে সংযুক্ত হয়েছে। যেমন, I just Googled something
৬-সবচেয়ে বেশী ভিজিট করা ওয়েবসাইটঃ গুগোল সকল সার্চ ইঞ্জিন থেকে বেশী মার্কেটিং করছে। সকল সার্চ ইঞ্জিন ব্যাবহারকারির ৬০% এর ও বেশী ইউজার গুগোল ব্যাবহার করে।
গুগোল এর পেইড রেজাল্টঃ
পেইড রেজাল্ট এর জন্য গুগোল এর Google AdWords নামে একটি সার্ভিস হয়েছে। এটিতে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ প্রদানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড এর উপর নির্দিষ্ট সাইট এর বিজ্ঞাপন দেখানো যায়। এটি পে পার ক্লিক সার্ভিস। গুগোল তার পেইড এড গুলোর মধ্যেও রেংকিং করে। বাজেট এবং ক্লিক এর পরিমান এর উপর মূল্য নির্ভর করে। গুগোল আপনার বিজ্ঞাপন আপনার সঠিক গ্রাহককে দেখাবে। গ্রাহক যখন আপনার বিজ্ঞাপন এ ক্লিক করবে, তখন গুগোল আপনার কাছ থেকে অর্থ নেবে। গুগোল বিজ্ঞাপন এ আরও কিছু সুযোগ সুবিধা হোল, টার্গেটেড ভিজিটর। যেমন, আপনি গোন দেশের, কোন বয়সের, কি পরিমান আয়ের ইউজার এর কাছে আপনার বিজ্ঞাপন দেখাতে চান, তা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। এছাড়াও দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য বেছে নিতে পারবেন।
এছাড়াও গুগোল এডসেন্স নামক একটি সার্ভিস এর মাধ্যমে আপনার বিজ্ঞাপন অন্যোন্য সাইট এ দেখানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। এটিও সার্চ রেজাল্ট এর মত টার্গেটেড হয়ে থাকে। গুগোল বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য শ্রেষ্ঠ প্লাটফর্ম।
গুগোল ডিরেক্টরিঃ
গুগোল একটি ওপেন ডিরেক্টরি ম্যানেজ করে। এটি একটি ওপেনসোর্স প্রোজেক্ট। এটি স্বেচ্ছাসেবক এর একটি দল নিয়ন্ত্রণ করে। গুগোল ডিরেক্টরিতে একটি সাইট এর অবস্থান অনুসারে গুগোল পেইজ রেংক প্রদান করে থাকে। গুগোল ডিরেক্টরি তে সাইটের অবস্থান সাইট এর মান, ব্যাকলিংক, কোয়ালিটি ব্যাকলিংক ইত্যাদি এর উপর নির্ভর করে।
মাইক্রোসফট লাইভ সার্চঃ
Microsoft Live Search (আগে নাম ছিল MSN Search) একটি সার্চ ইঞ্জিন, যেটি মাইক্রোসফট কোম্পানির তৈরি এবং এটি গুগোল ও ইয়াহু এর মত একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সার্চ ইঞ্জিন। এটি আমেরিকাতে চতুর্থ জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। গুগোল , ইয়াহু এবং বিং এর পরেই লাইভ সার্চ এর অবস্থান। লাইভ সার্চ নিজেকে সতন্ত্র করে রেখেছে বিভিন্ন নতুন নতুন সুযোগ সুবিধা দিয়ে। উদাহরণস্বরূপ, এখানে একই ওয়েবপেইজে অতিরিক্ত সার্চ রেজাল্ট দেখা যায়, ভিন্ন ভিন্ন সার্চ পেইজে যেতে হয়না। এখানে ফলাফলকে ব্যাবহারকারি নিজের মত করে সাজাতে পারে। যেমন, চাইলে রেজাল্ট পেইজগুলোর শুধু টাইটেল দেখতে পারে, টাইটেল ও শর্ট ডিস্ক্রিপ্সন দেখতে পারে এবং টাইটেল ও শর্ট ডিস্ক্রিপ্সন দেখতে পারে।
লাইভ এর অরগানিক রেজাল্টঃ
মাইক্রোসফট লাইভ সার্চ এর প্রচুর জনবল রয়েছে, যদিও এর পূর্ববর্তী ভার্সনগুলো অন্যোন্য সার্চ ইঞ্জিন (যেমন, Inktomi এবং Looksmart) থেকে ফলাফলের ব্যাপারে সাহায্য প্রহন করতো। ইয়াহু এর পরে লাইভ সার্চ Inktomi এবং Overture এর আংশিক মালিকানা কিনে , তারা বুঝতে পারল যে, তাদের নিজস্ব সার্চ পদ্ধতি উন্নয়ন করা উচিত। তারা তাদের সার্চ ইঞ্জিন প্রযুক্তি ১, জুলাই ২০০৪ সালে চালু করে এবং ৩১, জানুয়ারি ২০০৫ সালে ইয়াহু কে বাদ দিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যাবহার শুরু করে। ৪, মে ২০০৬ সালে লাইভ কোম্পানি ঘোষণা করে যে, তারা ইয়াহু পেইড সার্চ পদ্ধতিকেও পদদলিত করেছে। ততদিনে তারা সম্পূর্ণই নিজস্ব এলগরিদম ব্যাবহার করছিলো।
লাইভ এর পেইড রেজাল্টঃ
Live এর পেইড প্রোগ্রামকে বলা হয় adCenter । এটি অন্যগুলোর অনেক পরে পে পাড় ক্লিক সিস্টেম হিসেবে চালু হয়েছে। এটি খুবই ভাল মানের return on investment (ROI) এর নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে। গুগোল বা ইয়াহু এর মত এটিও পেইড এড গুলোর মধ্যে রেংকিং করে থাকে সবচেয়ে বেশী বিড প্রাইস ও ক্লিক এর পরিমান এর উপর। এটি আপনাকে আরও বেশী টার্গেটেড গ্রাহক প্রাপ্তিতে সাহায্য করে, এবং সেই অনুযায়ী অর্থ গ্রহন করে। যেমন, একজন বৃদ্ধ ও আর্থিক ভাবে সাবলম্বি ব্যাক্তির ক্লিক এর মূল্য একজন কিশোর বালকের ক্লিক এর মূল্য থেকে বেশী হবে। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চারটি সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে Yahoo!, Microsoft Live Search, Baidu (এটি একটি চাইনিজ সার্চ ইঞ্জিন। এই সিরিজ এর নবম খণ্ড এর চতুর্থ অধ্যায়ে এর সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে), এবং Google। যদিও গুগোল সার্চ ইঞ্জিন জগতে সিংহের আসন দখল করে রেখেছে, তথাপি ছোট ছোট সার্চ ইঞ্জিনগুলোও একটি বড় পরিমান ট্রাফিক একচেঞ্জ করছে।
এ ও এল (AOL)
AOL একটি কোম্পানি, যেটি কি না ১৯৮৩ সাল থেকেই চলে আসছে। এটি আগে গ্রাহক দের টি.এন্ড.টি টেলিফোন লাইন এর মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটার এ গেইম ডাউনলোড এর সুবিধা দিতো। যদিও খুব বেশী নয়, তারপরও এটি এখনও ই-মেইল, চ্যাট ও সার্চ ইঞ্জিন সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, AOL তার সকল সার্চ রেজাল্টই (অরগানিক ও পেইড) গুগোল এর মাধ্যমে প্রদান করে থাকে। তাই, আপনাকে AOL এ প্রথম এ আসতে হলে অবশ্যই গুগোল এর দিকে নজর দিতে হবে।
আস্ক (Ask.com)
আস্ক ডট কম প্রথমে Ask Jeeves হিসেবে তৈরি হয়েছিলো। এটি ১৯৯৬ সালে সম্পূর্ণ করেছিল Garrett Gruener এবং David Warthen । তবে, এটি চালু হয় ১৯৯৭ সালে। এটি নিজেকে ইয়াহু এবং এ ও এল থেকে আলাদা করেছে সাধারণ সার্চ কুয়েরি এবং কম্পাইল এর মাঝে এডিটর ব্যাবহার করে। (পরবর্তীতে মেটা সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা আছে)। প্রতিযোগিতার বাজারে Ask Jeeves বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন এর প্রযুক্তি ব্যাবহার করতো। ২০০১ সালে Teoma এর মালিকানা পাওয়ার পর আর ব্যাবহার করে নি। Teoma এটি কোর সার্চ ইঞ্জিন প্রযুক্তি, যেটি কি না এখনও ব্যাবহার করা হয়। ২০০৫ এর মার্চ এ InterActive Corp ঘোষণা করে যে, তারা Ask Jeeves কিনে নিয়েছে। এবং ঠিক এক বছর পরে, ২০০৬ এর মার্চ এ তারা এর নাম Ask Jeeves পরিবর্তন করে শুধু Ask.com করে। পরবর্তীতে তারা বাছাইকৃত সার্চ রেজাল্ট বা Blended Search (যে পদ্ধতিতে ছবি, ভিডিও, খবর ইত্যাদি আলাদা করে সার্চ রেজাল্ট এ দেখা যায়) চালু করে, কিন্তু প্রধান তিনটি সার্চ ইঞ্জিনকে পেছনে ফেলতে ব্যার্থ হয়। পরবর্তীতে এরা তাদের টার্গেট পরিবর্তন করে। আস্ক ডট কম এর প্রায় সকল পেইড এড পায় Google AdWords থেকে। আস্ক এর নিজস্ব কোন অভ্যন্তরীণ বিজ্ঞাপন সিস্টেম নেই। তারা যদি অভ্যন্তরীণ কোন বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন পায়, এবং সেটি অধিক লাভজনক হয়, তাহলে সেটিকে তারা, গুগোল এডওয়ার্ডস এ প্লেস করে দেয়।
ü ইঞ্জিনসমূহের মধ্যে উপযুক্ত স্থান খুজে বের করাঃ
আমরা প্রায় সবগুলো সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে সার্চ রেজাল্ট প্রদর্শনের কথাও জেনেছি। কিন্তু, আরও এক প্রকারের সার্চ ইঞ্জিন আছে। যেগুলোকে বলা হয়, ভার্টিকেল সার্চ ইঞ্জিন। ভার্টিকেল সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের সার্চ ইঞ্জিন, যেটি তার কাজ একটি নির্দিষ্ট এলাকা, ইন্ডাস্ট্রি বা নির্দিষ্ট ফাইল টাইপ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। গুগোল এর বেশ কয়েকটি ভার্টিকেল সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে, যেগুলো তার রেজাল্ট পেইজে Images, Maps ইত্যাদি হিসেবে দেখা যায়। আপনি যখন গুগোলে ইমেজ সার্চ পেইজে কিছু সার্চ করবেন, এটি আপনাকে শুধুমাত্র ইমেজ দেখাবে। নিচে প্রধান ৩ প্রকার ভার্টিকেল সার্চ ইঞ্জিন এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
1. Industry-specific
ইন্ডাস্ট্রি স্পেচিফিক সার্চ ইঞ্জিন এক ধরনের ভার্টিকেল সার্চ ইঞ্জিন। এটি কোন একটি বিশেষ ধরনের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান খুজে বের করতে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। কিছু কিছু রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এর নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন আছে। যেমন, Zillow.com, Roost.com এবং Realtor.com ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন এর মাধ্যমে বাড়ির তালিকা দেখা যায়।এবং ServiceMagic.com এর মত কিছু সাইট বাড়ি তৈরির কনট্রাক্টর খোঁজার কাজে ব্যাবহার করা হয়। মেডিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিগুলোর জন্য WebMD নামের একটি সার্চ ইঞ্জিন আছে যেটি চিকিৎসাভিত্তিক বিভিন্ন প্রশ্ন-উত্তর সার্চ করে। আপনি যদি আইন / বৈধতা সম্পর্কে কোন তথ্য খুজে থাকেন, তাহলে Findlaw.com এবং Lawyers.com আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।
এরকম বিষয়-উপযুক্ত সার্চ ইঞ্জিন খুব কম পরিমান ট্রাফিক প্রদান করে, কিন্তু সেই কম পরিমান ট্রাফিক আপনার জন্য Quality Traffic । কারন, এসব ইঞ্জিনে যারা সার্চ করে, তারা ঠিক সেই সেবাটিই খুজছে, যেটি আপনি প্রদান করছেন।
2. Local
লোকাল সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ভু-অঞ্চলের জন্য নির্মিত সার্চ ইঞ্জিন । এটি কে Geo-Targeted সার্চ ইঞ্জিন ও বলা হয়। যদিও, অনেক লোকাল সার্চ ইঞ্জিন আন্তর্জাতিক সাইটসমুহও ফলাফলে প্রদর্শন করে, তবুও ওই অঞ্চলের মানুষই ওই সার্চ ইঞ্জিন (প্রধানত) ব্যাবহার করে। আপনি যদি একটি পণ্য বা সেবা শুধুমাত্র একটি বা একাধিক নির্দিষ্ট ভু-খণ্ডে বা দেশে বিপণন করেন, তাহলে আপনার জন্য ওই দেশের লোকাল সার্চ ইঞ্জিন খুবই উপকারি। যেমন, বাংলাদেশের প্রথম সার্চ ইঞ্জিন pipilika.com । এছাড়াও মেজর সার্চ ইঞ্জিনগুলোর প্রত্যেকটি দেশের জন্য আলাদা লোকাল সার্চ ইঞ্জিন সেবা থাকে। যেমন, বাংলাদেশের জন্য গুগোল এর লোকাল সার্চ ইঞ্জিন google.com.bd । লোকাল সার্চ ইঞ্জিন এ সাইট সাবমিট করার সময় আপনি কয়েকটি সতন্ত্র কাইটেরিয়া সংযুক্ত করতে পারবেন। যেমন, নাম, ঠিকানা, মোবাইল ইত্যাদি। ধরুন, আপনি কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল এর সাইট একটি বাংলাদেশী লোকাল সার্চ ইঞ্জিন এ সাবমিট করবেন, তখন কেউ Hotel in Cox’s bazar লিখে সার্চ করলে আপনার সাইট পাবে।২০০৮ সালে গুগোল স্বয়ংক্রিয়ভাবে Geo-Targeted সার্চ সিস্টেম চালু করে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে কেউ সার্চ করলে এমনিতেই বাংলাদেশী সাইটগুলো আগে আসবে।
মেজর সার্চ ইঞ্জিনগুলোর সার্চ কুয়েরিতে ১% এর ও কম ক্ষেত্রে স্থান উল্লেখ করা থাকে। তাই বড় বড় শহরগুলোর নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন থাকে। TrueLocal.com এবং Local.com হুচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকাল সার্চ ইঞ্জিন। YellowPages.com, SuperPages.com, DexKnows.com এবং YellowBook.com ইত্যাদি সাইটও লোকাল সার্চ রেজাল্ট এর জন্য ভাল।
3. Behavioral
বিহেবিওরাল সার্চ ইঞ্জিন একটি বিশেষ কৌশলপূর্ণ সার্চ ইঞ্জিন। বিহেবিওরাল সার্চ ইঞ্জিন বিশেষ ইতিহাসভিত্তিক তথ্য খুজে বের করে। অন্য কথায়, এই সার্চ ইঞ্জিন আপনার আগের সার্চ কুয়েরি ইতিহাস পর্যালোচনা করে বোঝার চেষ্টা করে যে, আপনি ঠিক কি খোঁজার চেষ্টা করছেন। আপনি যদি কফি পান করেন (আগে কফি ভিত্তিক কোন তথ্য সার্চ করেন) তাহলে, এই সার্চ ইঞ্জিন আপনাকে কফি বিন, ক্যাফেইন ও কফি মেট ইত্যাদির বিজ্ঞাপন দেখাবে। একটি ভাল বিহেবিওরাল সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে Collarity (www.collarity.com) । এটি আপনার আচরনের উপর ভিত্তি করে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দেখাবে। এটি আপনার আচরন, আপনি কি ধরনের তথ্য সার্চ করেন, কোন ধরনের সাইট বেশী ভিজিট করেন ইত্যাদি আপনার ব্রাউজার এর হিস্টোরি থেকে নিয়ে এনালাইসিস করে আপনার চালচলনের সাথে সম্পর্কিত ফলাফল প্রদর্শন করে।
অভ্যন্তরীণ সার্চ ইঞ্জিনঃ
আপনি একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে একটি আর্টিকেল লিখছেন। এই বিষয়ে অনেক আগে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিলো। NYTimes.com তাদের পত্রিকার অনলাইন নিউজ এর একটি তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষন করে। কিন্তু, আপনি ভুলে গেছেন যে, খবরটি কত তারিখে প্রকাশিত হয়েছিলো। তাহলে আপনাকে অনেক দীর্ঘ সময় খোঁজাখুঁজি করতে হবে। সৌভাগ্যবশত তাদের একটি অভ্যন্তরীণ সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে। যেটি, তাদের পুরনো খবরগুলো থেকে কোন নির্দিষ্ট খবর নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড এর উপর নির্ভর করে খুজে বের করে। আমি বোঝাতে চেয়েছি, যে সার্চ ইঞ্জিন কোন নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মধ্যবর্তী তথ্যসমূহের মধ্যে তথ্য খুজে বের করে, তাদেরকে অভ্যন্তরীণ সার্চ ইঞ্জিন (Internal Search Engine) বলা হয়। বড় বড় ওয়েবসাইট,যেগুলোতে হাজার হাজার পেইজ রয়েছে সেগুলোতে কোন নির্দিষ্ট তথ্য খুজে বের করা খুব কষ্টসাধ্য। তাই, একটি সার্চ ইঞ্জিন এর তথ্যভাণ্ডার(Archive) থেকে তথ্য খুজে করার কাজে অত্যন্ত সহযোগিতাপূর্ণ। একটি খুবই ছোট / অল্প তথ্যপূর্ণ সাইটের জন্য সার্চ ইঞ্জিন না হলেও চলে। কিন্তু, একটি বড় সাইটে সার্চ ইঞ্জিন অবশ্য প্রয়োজনীয়। আপনার সাইটের অভ্যন্তরীণ সার্চ ইঞ্জিন আপনার সাইট এর (মেজর সার্চ ইঞ্জিনের) রেংকিং বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেন। একটি ভাল মানের অভ্যন্তরীণ সার্চ ইঞ্জিন আপনার সাইটে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। আপনি চাইলে গুগোল এর মাধ্যমে আপনার সাইটে অভ্যন্তরীণ সার্চ ইঞ্জিন সংযুক্ত করতে পারেন। আরও কিছু তথ্যের জন্য ভিজিট করুনঃ
http://www.google.com/enterprise/search/products/gsa.html
মেটা সার্চ ইঞ্জিনঃ
মেটা সার্চ ইঞ্জিন একটি বিশেষ ধরনের সার্চ ইঞ্জিন, যার কথা আপনি আগের লেখায় সামান্য উল্লেখ করেছিলাম। মেটা সার্চ ইঞ্জিন এর নিজস্ব কোন ডাটাবেজ বা তথ্যভাণ্ডার নেই। এটি অন্য সার্চ ইঞ্জিনসমূহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা সমন্বয় করে ফলাফল প্রদর্শন করে। এটি “দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ” নীতিতে কাজ করে। Dogpile.com এবং Metacrawler.com খুবই জনপ্রিয় দুইটি মেটা সার্চ ইঞ্জিন। যখন আপনি Metacrawler.com (এটি বর্তমানে সতন্ত্র সার্চ ইঞ্জিন zoo.com হয়ে গিয়েছে) এ কোন তথ্য সার্চ করবেন, তখন এটি প্রধান ৪ টি সার্চ ইঞ্জিন (Google, Yahoo!, Microsoft Live Search এবং Ask.com) এর ফলাফল একসাথে একই পেইজে প্রদান করবে। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন থেকে ফলাফল গ্রহনের পর মেটা সার্চ ইঞ্জিন অধিক জনপ্রিয় ফলাফলের ভিত্তিতে ফিল্টার করে থাকে। এটি হচ্ছে ইনডেক্সড সার্চ ইঞ্জিন এর মত এলগরিদম এপ্লাই করার সাথে মূল পার্থক্য। [এলগরিদম = এলগরিদম হচ্ছে একটি গানিতিক প্রক্রিয়া, যেটি কতোগুলো শর্তের ভিত্তিতে ফলাফলসমূহের অগ্রাধিকার বা রেংকিং নির্ণয় করে, যেটি প্রথম অধ্যায়ে বলা হয়েছিলো] এটি আপনাকে অরগানিক ও পেইড দুটি রেজাল্টই একসাথে দেখাবে, যেটি এই ইঞ্জিনের কাছে আপনার সার্চ কুয়েরি এর সাথে অধিক সম্পর্কিত মনে হয়েছে।
মেটা সার্চ ইঞ্জিন কি আপনাকে আপনার সাইট এ ভিজিটর আনতে সাহায্য করতে পারবে? হ্যাঁ, অবশ্যই পারবে। আপনি মেটা সার্চ ইঞ্জিন থেকে আপনার ভিজিটর পেতে পারেন, কারন মেটা সার্চ ইঞ্জিন স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করছে যে, সে কোথা থেকে কোন রেজাল্ট এনেছে। তাই, একটি ভাল কিওয়ার্ড এর উপর সাইট মেজর সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে এস.ই.ও করলে আপনি মেটা সার্চ ইঞ্জিন থেকেও প্রচুর ভিজিটর পাবেন। [এই বইয়ের প্রথম খণ্ডের চতুর্থ অধ্যায়ে কিওয়ার্ড বিষয়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে]
মেটা সার্চ ইঞ্জিন এর প্রতিটি ফলাফলের শেষে ব্র্যাকেট এ সোর্স বা উৎস লেখা থাকে। অর্থাৎ, কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে এই ফলাফল সংগ্রহ করা হয়েছে, সেটি উল্লেখ করা হয়। আপনি এটি দেখে কোনটি, পেইড রেজাল্ট সেটিও বুঝতে পারবেন। যেমন, Found on Ads by Yahoo! । এখানে এই রেজাল্টটি ইয়াহু এর পেইড রেজাল্ট। যদিও, মেটা সার্চ ইঞ্জিন ব্যাবহারকারির জন্য অবশ্যক না। কারন, ইউজার চাইলেই ৪ টি উইন্ডোতে ৪ টি সার্চ ইঞ্জিন ওপেন করে সার্চ করতে পারে। কিন্তু, এটি সময় বাচায়। আর প্রফেশনাল ইন্টারনেট ইউজাররা সময়ের প্রতি অধিক যত্নশীল।